Thursday, October 27, 2016

এক অপরিণত ভালোবাসা

Share it Please

বিয়ের পর থেকেই রুপন্তির স্বপ্ন তার কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান জন্ম নিবে।

সাত বছর সংসার জীবন কিন্তু আজও রুপন্তি একটা সন্তানের মুখ দেখতে পারল না। যখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারল আসলে সমস্যা তার স্বামীর না তার নিজের। তখন নিজেকে এই পৃথিবীর সবথেকে অপরাধী মনে হল রুপন্তির। তার নিজের ইচ্ছাকে না হয় বিসর্জন দিল, কিন্তু তার স্বামীর কি হবে?

রুপন্তির স্বামী একটা বেসরকারি অফিসে চাকুরী করে। সেখানে রিতা নামের একটি মেয়ের সাথে তার পরিচয় হয় এবং তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্ব পর্যন্ত গড়ায়।

রিতার স্বামী থাকে বিদেশে। বিয়ের তিন বছর পরেই বিদেশে চলে যায় এবং সেখান থেকে অল্পকিছু টাকা পাঠিয়ে দেয় আর রিতা চাকুরী করে। এইতো এভাবেই চলছিল রিতার সংসার জীবন।

রিতার সাথে রুদ্র তার সাংসারিক জীবনের সব কথা শেয়ার করে। অফিসের ফাঁকে দুজনে চলে যায় কোন রেস্টুরেন্টে বা চায়ের দোকানে। স্বামীর বিদেশে থাকার কষ্টের কথা আর স্ত্রীর বাচ্চা না হওয়ার কষ্টের কথা তারা একে অপরের কাছে শেয়ার করে অনেক তৃপ্তি পায়। আর তাইতো একটু সময় পেলেই দুজনে মেতে উঠে গল্পে।

একদিন ফোন করে রিতা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। রুদ্র জিজ্ঞেস করে জানতে পারে তার স্বামীর সাথে ফোনে ঝগড়া হয়েছে। কি করবে বুঝতে না পেরে রুদ্র চলে যায় রিতার বাসায়। রিতা দরজা খুলেই রুদ্রের বুকে মাথা রেকে কান্না শুরু করে। রুদ্র একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নিয়ে রিতাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর দুজনের ঘোর কাটলে একে অপরকে বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে সোফায় বসে গল্প শুরু করে। এভাবেই ধীরে ধীরে নিজের অজান্তেই একে অপরের কাছে চলে আসে রুদ্র ও রিতা।

রুপন্তি সারাক্ষণ আনমনা হয়ে বসে থাকত। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না যে, সে আর কোনদিন মা ডাক শুনতে পারবে না। এদিকে রুদ্রের আনমনা ভাব সে ধরে ফেলে। অনেকদিন থেকেই লক্ষ্য করতে থাকে রুদ্রের দেহ বিছানায় পড়ে থাকলেও মন থাকে অন্য কোথাও। সেই সাথে রুদ্রের মেজাজ দিন দিন খিটখিটে হতে থাকে। অল্পতেই রেগে যায়।

একদিন রুপন্তি ও রুদ্রের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয় এবং রুদ্র বাসা থেকে বের হয়ে চলে যায় রিতুর বাসায়। রিতু রুদ্রকে দেখে ভীষণ খুশি হয় এবং চা বানানোর জন্য রান্নাঘরে চলে যায়। রুদ্র সোফা থেকে উঠে রিতাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দেয়। রিতা একটু চমকে উঠলেও সে অনুভূতি, ভালোলাগা যেন তার জীবনে প্রথম। দুজনে স্থির হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। কিছুদিন পরেই রুদ্র রিতাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এতে রিতাও অমত করল না।

যখন রুদ্র তার স্ত্রী রুপন্তির চোখকে ফাঁকি দিয়ে ও রিতা তার স্বামীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। ঠিক এমন সময় রিতার স্বামী কিছু না জানিয়েই বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসে। এতদিন পর স্বামীকে দেখে চমকে উঠলেও মনে মনে ভয় হচ্ছিল রুদ্রের সাথে গড়ে উঠা অপরিণত ভালোবাসার জন্য।

রিতার স্বামী সেই রাতে রিতাকে অনেকবার আদর করে। রিতা পৃথিবীর সবকিছু ভুলে গিয়েছিল সেই সুখের মুহূর্তে। তার মনে পড়তে থাকে তাদের বাসর রাতের কথা। বিবাহিত জীবনের কথা এবং সেই রাতেই রিতার স্বামী রিতাকে জানায় সে একেবারে দেশে ফিরে এসেছে। রিতার মন ঘুরে যায়। স্বামীর আদর সোহাগে সবকিছু ভুলে যায় রিতা।

রুদ্র সবকিছু জানার পর আর কিছুই করার ছিল না। রিতা রুদ্রের কাছে মাফ চেয়ে নিয়েছিল। তার কিছুদিন পর রুপন্তির মৃত্যু হয়। রুপন্তি জরায়ু ক্যান্সারে ভুগছিল...

রাস্তায় রাতের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোষ্টের মত
ধূধূ মরুভূমির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা দাঁড়কাকের মত

রুদ্র একা !! আজ সে বড় একা !!

No comments:

Post a Comment

About me

Blogroll

About